বাঙালির স্বভাব সম্পর্কে এই কথাটা খুব চালু ছিল এক সময় যে, দুজন বাঙালি একসঙ্গে হলে একটা দুর্গাপুজো হয়।
অর্থাৎ বাঙালি উৎসব, সংগঠন খুব ভালোবাসে করতে, খুব পারে করতে।
কিন্তু পরের লাইনটিই মারাত্মক।
সে-ও বাঙালির স্বভাবের খারাপ দিকটি নিয়ে। তা হলো, দুজন বাঙালি একসঙ্গে হয়ে একটা দুর্গাপুজো তো করে ফেলল – কিন্তু যেই আর একজন জুটল, মানে তিনজন হলো – বাঙালির পুজোও হয়ে গেল তিন খানা। হ্যাঁ, তিনখানা। মানে সাধের সংগঠন ভেঙে চুরমার। বাঙালি গড়তেও পারে, সামান্য কারণে ভাঙতেও পারে।
বুদ্ধিমান বাঙালির নাকি এটাই ট্র্যাজেডি।
সৌভাগ্যবশত, আমাদের সংগঠন, অ্যাস্ট্রোলজি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোলজারস ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন এই গোত্রের মধ্যে পড়েনি। তিনটে দুর্গা পুজোর কথা আমাদের কেউ ভাবেওনি। তবে, চারদিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের দ্রুত ওঠা পড়া দেখে মন খারাপ হয়, ভয়ও হয়। সবাই জানে, গড়তে সময় লাগে, নিষ্ঠা লাগে, সহিষ্ণুতা লাগে – পারস্পরিক শ্রদ্ধা লাগে। কিন্তু ভাঙতে কিছুই লাগে না। অসহিষ্ণু হওয়া বা দুর্বিনীত হওয়ার মধ্যে আত্মতৃপ্তি পায় কেউ কেউ – তাতে ভেঙে ফেলা যায় যা খুশি – গড়া যায় না।
বাঙালির কিন্তু দুর্গাপুজোর মধ্যে দিয়ে আমরা গড়াটাই বেশি দেখি এখন। বিশেষ করে, পুজোর পরিকল্পনার বিষয়টা তো সংগঠন ছাড়া হতেই পারে না। আর সেখানে যদি পুরস্কারের তৃপ্তি জোটে, তাহলে তো কথাই নেই।
আমরা, অ্যাস্ট্রোলজি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোলজারস ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কিন্তু কোনও পুরস্কারের মধ্যে যাই নি। আমরা বরং একেবারে অন্যভাবে সম্মানিত করার কথা ভেবেছি তাঁদের। যাঁদের ছাড়া পুজো সম্পন্ন হয় না। আমরাই প্রথম যারা পুরোহিত সম্মাননার কথা ভেবেছি। বাঙালির তো হরেক সংগঠন, সুতরাং আরও অন্য কেউ হয়তো অন্য রকম ভাবে পুরোহিত সম্মান করতেও পারেন।
আমরা, এই রাজ্যের বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে ঘুরে বিভিন্ন ক্লাবের পুজো দেখেছি। হ্যাঁ, পরিস্কার করে বলি, আমাদের যে কটি টিম পুরোহিত সম্মাননা নিয়ে বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে গিয়েছিল, তারা বাইরের সাজসজ্জার সঙ্গে ‘পুজো’ই দেখেছেন মূলত।
পুজো করেন তিনি – আমরা তাঁকেই সম্মান জানাবো।
আমরা তাঁকে, তাঁর পেশায় উৎসাহিত করবো।
আমাদের সমাজে তাঁদের জন্য যে উচ্চস্থান – আমরা সেটাই বলব তাঁকে বা তাঁদের।
দিন কিন্তু কমছে একটি একটি করে। ২ নভেম্বর বিকেল তিনটে দমদম রবীন্দ্র ভবন উপছে পড়ুক আপনাদের সমাগমে – এই আমাদের প্রার্থনা। আপনাদের করতালি, তাঁদের পুজোপাঠে নিষ্ঠাবান হতে আরও উৎসাহিত করবে।
পুরোহিত সম্মান, ২০১৯ – সবাই স্বাগত।

Source My Facebook